June 24, 2025 1:31 pm

চট্টগ্রামের অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলো বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত

চট্টগ্রাম নগরের অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলোতে ইমারত নির্মাণ আইনের তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠছে একের পর এক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি বিদ্যালয়, ল্যাব, হাসপাতাল ও ক্লিনিক। এ নিয়ে নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা। ১৯৫২ সালের ইমারত নির্মাণ আইনের ৩ এর ক ধারায় উল্লেখ আছে, আবাসিক বাড়ির জন্য ইমারত নির্মাণের অনুমতি নিলে ওই ভবনকে আবাসিক কাজেই ব্যবহার করতে হবে। অন্য কোনো কাজে, যেমন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না। অথচ কতিপয় বাড়ির মালিক আবাসিক এলাকার হয়ে এই আইন মানছেনা। আবাসিক এলাকার সৌন্দর্য, নিরাপত্তা ও হয়রানীর বিষয় চিন্তা না করে বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মানের ভাড়াটিয়াদের কাছে বেশী লাভের আশায় ভাড়ায় লগিয়ত করছে। এতে দিনের পর দিন বিলীন হতে যাচ্ছে নগরীর ভিতরের অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলো।

নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকা, নাসিরাবাদ আবাসিক এলাকা, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা, খুলশী আবাসিক এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ভীড়ে বুঝা যায়না এসব এলাকাগুলো আবাসিক এলাকা। আবাসিকের রুপ হারিয়ে গড়ে উঠছে কিন্ডারগার্টেন, স্কুল, কোচিং সেন্টার, কলেজ, কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র, মাদকাসক্ত নিরাময়কেন্দ্র, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি কার্যালয়, সুপার শপ, বিউটি পার্লার, রোগ নির্ণয়কেন্দ্র, অবৈধ পার্কিং, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয় ইত্যাদি।

জানা যায়, এসব এলাকার ব্যবসায়ী ভবন মালিকরা আবাসিক হিসাবে ইমারত নির্মান করলেও কোন আইনের তোয়াক্কা না করে তারা বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছে বাড়ি ভাড়ায় লগিয়ত করেন। এতে এককালীন অগ্রিম টাকা যেমন পাওয়া যায়, তেমনি বানিজ্যিক হিসাবে মাসিক একটা ভাড়া আসে। আবাসিকের বাসিন্দাদের কোন নিরাপত্তা ও হয়রানীর তারা বুঝতে চাননা।

সরেজমিনে আরো দেখা যায়, পাঁচলাইশ আবাসিকের প্রতিটি বাড়িই পরিণত হচ্ছে একেকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে। প্রতিদিনই একটা না একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। ভবনের নিচতলার পার্কিংয়ের জায়গাও যেন এ থেকে বাদ যাচ্ছেনা। যারা বানিজ্যিক ভবন করছে তারা শুনছেনা কোন আইন বা নিয়মনীতি। সিডিএকে ম্যানেজ করে, সিটি কর্পোরেশন ও পরিবেশের ছাড়পত্র নিতে চেষ্টা করে। অসংখ্য প্রাইভেট ক্লিনিক, হসপিটাল, অর্ধশত ডায়গনস্টিক সেন্টার, কমিউনিটি সেন্টার, ব্যাংক, স্কুল, মুদিমনিহারি দোকান, লন্ড্রি, সেলুন, রেস্তোরাঁ, এটিএম বুথসহ আবাসিকটি বানিজ্যিক এলাকায় রুপ নিচ্ছে

এই আবাসিক এলাকার ৬নং রোডের মুখেই গড়ে উঠছে উৎসব সুপার শপ, যার ফলে তাদের ক্রেতাদের পার্কিংয়ের কারনে সবসময় লেগে থাকে যানজট। সেখানে থাকা অনেক বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সাথে তাদের যানজট নিয়েছে নতুন মাত্রা। আরো গড়ে উঠেছে পলি ক্লিনিক, হলি হেলথ, সার্জিকোপ, পাঁচলাইশ শিশু ও জেনারেল হসপিটাল, সেবা হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড, কেয়ার ল্যাব, চিটাগাং ল্যাব, ইবিএল ব্যাংক, সিএসবিএস কলেজ, এশিয়ান হেলথ সেন্টার, সুইসপার্কসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান। এতো এতো বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ভীড়ে এই এলাকাটাযে আবাসিক এলাকা তা বুঝা দুরুহ হয়ে পড়ছে।

উল্লেখ্যযে, ২০১৩-২০১৫ সালের শেষের দিকে নগরীর পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জসহ কয়েকটি আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট, গুদাম ও হাসপাতালের যন্ত্র থেকে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। একাধিক নোটিশ পেয়েও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরিয়ে না নেয়ায় ২০১৫ সালের শেষের দিকে কয়েকটি আবাসিক এলাকায় অভিযানও চালায় সিডিএ। কিন্তু কোনো এক রহস্যজনক কারণে ২০১৬ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত কোনো অভিযান চালায়নি সিডিএ। এটা ঠিক যে, আবাসিক এলাকায় কিছু বাণিজ্যিক চাহিদাও থাকে। এজন্য পরিকল্পনার সময় আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি জোন আলাদা করা হয়, যাতে অন্য কোনো কিছু আবাসিক এলাকার বৈশিষ্ট্য নষ্ট না করে।

এ বিষয়ে গণপূর্ত নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম খান বলেন, গণপূর্তের ভুমিতে পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে। আবাসিক হিসাবেই অনুমোদন রয়েছে। এখানে বানিজ্যকরনের কোন সুযোগ নাই। শুনেছি, এলাকার কতিপয় মালিক আবাসিকের আইন ভঙ্গ করে এসব বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিচ্ছেন। তাদেরকে নোটিশ করছি। আবাসিক এলাকায় বানিজ্যকরণ রোধে আমরা সার্বিক ব্যবস্থা নিবো।

 

পাঁচলাইশ আবাসিক কল্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, এই এলাকার অধিকাংশ বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলছে অবৈধভাবে। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত এই আবাসিক এলাকায় বসবাস করছি। নিরাপত্তাসহ নানাবিধ হয়রানির শিকার হচ্ছে আমাদের আবাসিকের বাসিন্দাদের। আমরা সমিতির পক্ষ থেকে বানিজ্যকরনের বিরুদ্ধে ব্যানার টাঙ্গিয়েছি। তবু বন্ধ হচ্ছেনা বানিজ্যিকরন। আমরা সিডিএ, সিটি কর্পোরেশনকে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোন ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছেনা।

নগরীর বাকী চারটি আবাসিক এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চান্দগাঁও, কাতালগঞ্জ, নাসিরাবাদ, খুলশী আবাসিক এলাকায় অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় দুইশয়ের মতো। এখানেও রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র, মাদকাসক্ত নিরাময়কেন্দ্র, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি কার্যালয়, সুপার শপ, বিউটি পারলার, ল্যাব, হাসপাতাল।

এ বিষয়ে সিডিএ অদৃশ্য কারণে নিরব ভূমিকা পালন করছে।

Tags :

> By The Same Authors

লোহাগাড়ায় ট্রাকের নিচে চাপা পড়ল পুলিশ, ভিডিও ভাইরাল

নিয়ম না মানায় মোটরসাইকেলকে থামাতে গিয়ে সহকর্মীকে মর্মান্তিক পরিণতির দিকে ঠেলে দিলেন এক পুলিশ সদস্য। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ায় ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল। ৫৭ সেকেন্ডের ভিডিও নিয়ে

বড়পুকুরিয়া খনিতে কয়লা উত্তোলন বন্ধ

দিনাজপুরের পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় সাময়িক উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে। সোমবার (২৩ জুন) দুপুর থেকে খনির ১৩০৫ কোল ফেইজের মজুত শেষ হওয়ায় কয়লা উত্তোলন বন্ধ করা

Russia ready to help Iranian people: Putin

Russian President Vladimir Putin told Iran’s foreign minister on Monday there was no justification for the U.S. bombing of his country and that Moscow was trying to help the Iranian

> By The Same Authors

লোহাগাড়ায় ট্রাকের নিচে চাপা পড়ল পুলিশ, ভিডিও ভাইরাল

নিয়ম না মানায় মোটরসাইকেলকে থামাতে গিয়ে সহকর্মীকে মর্মান্তিক পরিণতির দিকে ঠেলে দিলেন এক পুলিশ সদস্য। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ায় ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল। ৫৭ সেকেন্ডের ভিডিও নিয়ে

বড়পুকুরিয়া খনিতে কয়লা উত্তোলন বন্ধ

দিনাজপুরের পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় সাময়িক উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে। সোমবার (২৩ জুন) দুপুর থেকে খনির ১৩০৫ কোল ফেইজের মজুত শেষ হওয়ায় কয়লা উত্তোলন বন্ধ করা

Russia ready to help Iranian people: Putin

Russian President Vladimir Putin told Iran’s foreign minister on Monday there was no justification for the U.S. bombing of his country and that Moscow was trying to help the Iranian

Search

Recent Comments

    Follow us on facebook