ভোর থেকেই হামদ, নাত, তাকবির, দরুদ শরিফ ও জিকিরে মুখর নগর। এর মধ্যেই আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নগরের ষোলশহরে জড়ো হতে থাকেন নানা বয়সী মানুষ। বেলা বাড়তেই মানুষের উপস্থিতি প্রায় লাখ ছাড়িয়ে যায়। এরপর বের হয় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে জুলুস।
আজ শনিবার সকালে নগরের ষোলশহরের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে এই জশনে জুলুস বের হয়। এতে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লাখো মানুষ অংশ নেন। ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিবছর ১২ রবিউল আউয়াল আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম নগরে এ জশনে জুলুস অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবার ছিল ৫৪তম জশনে জুলুস।
এদিকে, জশনে জুলুসে গিয়ে তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে নগরীর মুরাদপুর মোড় এলাকায় জুলুসের র্যালিতে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান।
এবার ৫৪তম এই জুলুসে নেতৃত্ব দেন সৈয়দ মুহাম্মদ সাবের শাহ। অতিথি ছিলেন শাহজাদা সৈয়দ মুহাম্মদ কাসেম শাহ ও সৈয়দ মুহাম্মদ মেহমুদ আহমদ শাহ। আয়োজক সংগঠন জানায়, ১৯৭৪ সালে আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রহ.) এ জশনে জুলুসের প্রবর্তন করেন। এর পর থেকে আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় এ জুলুস আয়োজন করা হয়।
জশনে জুলুসে অংশ নিতে ভোর থেকে নগর ও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকজন জামেয়া মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন। কেউ হেঁটে, আবার কেউ ট্রাক কিংবা পিকআপের ওপর চেপে জুলুসে অংশ নিয়েছেন। এ সময় সড়কের বিভিন্ন মোড়ে বিশুদ্ধ পানি, শরবত ও শুকনা খাবার বিতরণ করতে দেখা যায়। এ ছাড়া পতাকা, ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে সড়কগুলো।
জুলুস ঘিরে নগরে নিরাপত্তা জোরদার করে নগর পুলিশ। পাশাপাশি জুলুসের স্থানে গোয়েন্দা পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা বাড়ানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, জুলুস চলাকালে বিকল্প সড়কে যান চলাচলে নির্দেশনা দেওয়া ছিল। তা ছাড়া ছুটির দিন হওয়ার যানজট স্বাভাবিক রয়েছে।
ঢলতি বছর নিরাপত্তার স্বার্থে জুলুসের পরিসর ছোট করা হয়েছে। প্রতিবছর ষোলশহর জামেয়া মাদ্রাসা মাঠ থেকে শুরু হয়ে বিবিরহাট, মুরাদপুর, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, জামালখান, কাজীর দেউড়ি, ওয়াসা, জিইসি, ২ নম্বর গেট ঘুরে দুপুরে জামেয়া মাদ্রাসা মাঠে শেষ হতো জুলুস। এবার ষোলশহর থেকে মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট ও জিইসি মোড় ঘুরে একই পথে ফিরে যায় জুলুস।
আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের মুখপাত্র মোছাহেব উদ্দিন বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার জুলুসের রুট ছোট করা হয়েছে। প্রশাসন আমাদের অনুরোধ করেছেন জিইসি মোড় পর্যন্ত জুলুস করতে। আমরা তাদের অনুরোধে রুট ছোট করেছি, তবে এতে জুলুসের আবহ কমেনি।’