চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের এলাকা টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। সোমবার (২৮ জুলাই) ভোর থেকে থেমে থেমে একটানা বৃষ্টির কারণে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে হাঁটুসমান জলাবদ্ধতা। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অফিসগামী মানুষ, শিক্ষার্থী এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা।
সকালে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, জিইসি মোড়, দুই নম্বর গেট, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ,পাঁচলাইশ,চান্দগাঁওসহ বহু স্থানে জমেছে হাঁটু পরিমাণ পানি। এসব এলাকায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সড়কে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট।
যানজটে আটকে পড়েছে অ্যাম্বুলেন্স, স্কুল বাস, অফিসগামী হাজারো মানুষ। অনেকে পানিতে হাঁটতে বাধ্য হয়েছেন কয়েক কিলোমিটার পথ। তবুও সময়মতো কোথাও পৌঁছানো যেন দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।জলমগ্ন হয়েছে অনেক বাড়িঘরও। রান্নাঘর থেকে শোবার ঘর- সব জায়গায় পানি ঢুকে পড়েছে। শিশু, বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ কষ্টে রয়েছেন। আয়-রোজগারেও পড়েছে টান।
এ পরিস্থিতির সুযোগে ভাড়া বাড়িয়ে নিচ্ছেন সিএনজি ও অটোরিকশা চালকরা। সাধারণত ৩০ টাকার ভাড়া এখন ৫০ টাকা কিংবা তারও বেশি আদায় করছেন তারা।
আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা রাজিব বলেন, ছেলেকে স্কুলে নিতে বের হয়েছিলাম, কিন্তু রাস্তায় পানি থাকায় হেঁটে যাওয়া যাচ্ছিল না। রিকশাও পাচ্ছি না, আর পেলেও চালক ৩০ টাকার জায়গায় ৫০ টাকা ভাড়া চেয়েছে।
চকবাজারের সুমি জানান, এইচএসসি পরীক্ষা দিতে বৃষ্টির মধ্যে রওনা হয়েছি। রাস্তায় নামতেই দেখি থইথই পানি। রিকশা পাচ্ছি না, আবার কেউ কেউ দ্বিগুণ ভাড়া চাচ্ছে।
পাঁচলাইশ এলাকার বাসিন্দা ফারহানা সুলতানা জানান, সকাল থেকেই হাঁটু পানি। ধীরে ধীরে পানি আরও বাড়ছে। ঘর থেকেও বের হওয়া যাচ্ছে না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সকাল থেকেই জলাবদ্ধতার ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৫৬.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আমবাগান কেন্দ্রে একই সময়ে রেকর্ড করা হয় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি। আবহাওয়াবিদ মাহমুদুল হাসান জানিয়েছেন, নিম্নচাপ উপকূল অতিক্রম করলেও এর প্রভাব এখনও বিদ্যমান। বৃষ্টি আরও দুই-তিন দিন অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সকাল ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
অন্যদিকে, কর্ণফুলী নদীতে রবিবার বিকেল ৩টায় জোয়ারের উচ্চতা ছিল ৩ দশমিক ৬৫ মিটার, যা বিপদসীমা ৪ দশমিক ১৫ মিটার থেকে কিছুটা নিচে। হালদা নদীর পানি এখনও স্বাভাবিক থাকলেও এর স্রোত বেড়েছে।
নগরবাসী আশঙ্কা করছেন, টানা বৃষ্টির সাথে জোয়ার একসঙ্গে চলতে থাকলে জলাবদ্ধতা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। সেইসাথে পাহাড়ধসের আশঙ্কাও বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
Total Views: 87







