রাজধানীর ধানমন্ডিতে সফিউদ্দিন শিল্পালয়ে ১১ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শিল্পী মুহাম্মদ মনসুর কাজীর বিমূর্ত এর সহাবস্থান শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী।
শিল্পীর মুহাম্মদ মনসুর কাজীর বিমূর্ত শিল্প: প্রত্যক্ষ ইন্দ্রিয়গত উপলব্ধির বহিঃপ্রকাশ। বিমূর্ত শিল্প এমন এক অভিব্যক্তি, যা দৃশ্যমান বাস্তবতার হুবহু প্রতিরূপ নয়; বরং এর অন্তর্নিহিত প্রভাব তুলে ধরতে আকার, রং, রূপরেখা ও অঙ্গভঙ্গির আশ্রয় নেয়। বিমূর্ত শব্দটির অর্থই হলো ‘আলাদা করা’ বা ‘প্রত্যাহার করা’- এখানেই নিহিত এর দার্শনিক তাৎপর্য।
শিল্পী মুহাম্মদ মনসুর কাজীর শিল্প ভাষা এই বিমূর্ততার মাধ্যমে নিজস্ব ব্যঞ্জনায় প্রকাশিত হয়েছে। তার তৃতীয় একক প্রদর্শনীতে বলা যেতে পারে ‘বিমুর্তের সহাবস্থান’, যেখানে বিমূর্ততার ভিতরেও একটা সুস্পষ্ট কাঠামো লক্ষ্য করা যায়। এ ‘সহাবস্থান’, শুধু অস্তিত্বের নান্দনিক অনুবাদ নয়, বরং দৃশ্যমান জগতের স্বরণীকৃত রূপায়ণ, যা কখনো ভূদৃশ্য, কখনো চেহারা বা অন্য কোন রূপ থেকে অনুপ্রাণিত হলেও, রূপান্তরিত হয়ে দাঁড়ায় এক স্বতন্ত্র ব্যতিক্রম।
শিল্পী মুহাম্মদ মনসুর কাজীর শিল্পকর্ম যেন প্রত্যক্ষ ইন্দ্রিয়গত উপলব্ধির বহিঃপ্রকাশ। জ্যামিতিক রূপ, রেখা, গঠন, স্বর ও রঙের সুনিপুণ ব্যবহারে তিনি গড়ে তোলেন এক ধরনের অন্তর মুখী অভিজ্ঞতা, যা অনুভব করা যায়-কিন্তু ব্যাখ্যা করা সহজ নয়। তার ‘ইমোশন সিরিজ’- এর চিত্রগুলোতে বিমুর্ত শিল্পের সেই নৈতিক মাত্রা-যেনন শৃঙ্খলা, সরলতা, আধ্যাত্মিকতা ও বিশুদ্ধতা-স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়। তার ‘ফেইস সিরিজ’-এ দেখা যায় এক অভিনব রূপান্তর- চেহারা থেকে বিমূর্ততার দিকে যাত্রা, এমনকি অচেনা হয়ে যাওয়ারও প্রয়াস। এতে একদিকে দৃশ্যমান বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্নতা যেমন আছে, তেমনি অন্যদিকে রয়েছে এক গভীর অন্তঃসার। শিল্পীর জন্য রূপ নয়, অনুভবই মুখ্য।
শিল্পী মুহাম্মদ মনসুর কাজীর প্রতিটি শিল্পকর্মেই রয়েছে বৈচিত্রপূন্য প্যাটার্ন ও কম্পোজিশনের এক উজ্জ্বল উপস্থিতি, যা দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। চিত্রশিল্পী হিসেবে তিনি অত্যন্ত সচেতন, তার আছে এক প্রখর ও ব্যতিক্রমী দৃষ্টিভঙ্গি। বিশ্বব্রক্ষাণ্ডের রূপ-রস-গন্ধ তিনি গ্রহণ করেন নিজস্ব অভিজ্ঞতায়, আর সেই উপলব্ধি নিরাসই রূপ পায় তার ক্যানভাসে। দেখা জগতের মধ্যেও তিনি খোঁজেন সেই অদেখাক, সেই অদেখা- অবলোকনের শক্তিই তাকে ভিন্ন কিছু আবিষ্কারে অনুপ্রাণিত করে।
তার শিল্পকর্মে প্রকৃতি যেমন ধরা দেয়, তেমনি ধরা দেয় শিল্পীর অন্তরলোক। তাই কোন ছবি হয়তো চেনা মনে হয়, কিন্তু তাতে লুকিয়ে থাকে এক অনুচ্চারিত ভাষা, এক নিঃশব্দ ব্যাখ্যা। তার কাজ শুধু শৈল্পিক দক্ষতার নয়, বরং পরিশ্রম, মেধা ও অন্তর্দৃষ্টি- সব মিলিয়ে এক অনন্য সৃজন।
শিল্পরসিকদের মনে তার ছবি জাগায় গভীর ভালোলাগার অনুভব । প্রকৃতির প্রতি এক অন্তর্জাত আরাধনার ছন্দ তার ছবিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশিত হয়। আর এই ছন্দমযতাই শিল্পী মুহাম্মদ মনসুর কাজীর বিমুর্ত শিল্পভাষাকে করে তোলে সত্যিকারের অনন্য।
প্রদর্শনী চলবে ১১ জুলাই হতে ১৫ জুলাই পর্যন্ত।







