চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, “জনগণের দুর্ভোগ কমাতে হলে শুধু কথায় নয়, কাজের মাধ্যমে প্রমাণ দিতে হবে। কেউ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে ছাড় দেওয়া হবে না।”
আজ বুধবার লালদিঘী চসিক পাবলিক লাইব্রেরি সম্মেলন কক্ষে টিসিবি কার্ড বিতরণ ও নগর পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় মেয়র বলেন, আজকে মূলত আপনাদের সাথে যে মত বিনিময়ের আয়োজন করা হয়েছে তার কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে কিছু সমস্যা আমার চোখে পড়ছে। যেগুলো অত্যন্ত জনসম্পৃক্ত। যেগুলোর কারণে আমি মনে করছি কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি এজ ওয়েল এজ আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে ঝুকিপূর্ণ স্ল্যাব ও ম্যানহোল। খাল-নালা পরিষ্কারে গাফিলতি। ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারে গাফিলতি। মশক নিধন অভিযানে শৈথিল্য। রাস্তার গর্ত। এ সমস্যাগুলো সমাধান করতে চাই।
স্ল্যাব প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, যেহেতু খাল-নালার স্ল্যাবগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সাথে সম্পর্কিত আর স্ল্যাব খুলে কিন্তু ময়লাগুলো নিতে হচ্ছে এবং সাম্প্রতিক নালাগুলো আমরা ক্লিন করেছি সেহেতু আমি আপনাদেরকে সতর্ক করতে চাই যাতে দ্রুত এগুলো ক্লিন করার পরে আবার যাতে ঢেকে দেওয়া হয়। যেকোনো মুহূর্তে যেগুলো এক্সিডেন্ট করতে পারে। আজকে আমি চকবাজার, কাপাসগোলা, উর্দুগলি, মুন্সিপুকুর পাড়, কাতালগঞ্জ, বৌদ্ধ মন্দির এসব জায়গায় আমি আজকে ঘুরেছি। আমি দেখেছি বিভিন্ন নালা পরিষ্কার করার জন্য স্ল্যাবগুলো তারা খুলছে।
“উন্মুক্ত খাল-নালা জীবনের ঝুঁকি তৈরি করছে। এজন্য সিভিল এবং পরিচ্ছন্ন বিভাগের সুপারভাইজাররা এ বিষয়টির সমাধান করবেন। আপনারা ঝুকিপূর্ণ স্ল্যাব এবং উন্মুক্ত যত নালা পাবেন সেগুলো দেখবেন। এ ব্যাপারে তালিকা করে আপনারা ওয়ার্ড ভিত্তিক একটা বাজেট করে ফেলবেন। ওয়ার্ড ভিত্তিক বাজেট করে সিভিলের সুপারভাইজাররা এটা চিফ ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের কাছে এবং পরিচ্ছন্ন বিভাগের সুপারভাইজাররা প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তার কাছে জমা দিবেন। আগামী বুধবার আমি আবারো আপনাদের সাথে বসে এ ব্যাপারে জবাবদিহি নিব।যেসব জায়গায় খাল বা নালায় স্ল্যাব উন্মুক্ত ফেলে রাখা হয়েছে, সেগুলো লাল পতাকা দিয়ে চিহ্নিত করবেন।
পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে গাফিলতির জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র বলেন, “ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের পারফরম্যান্স দিন দিন খারাপ হচ্ছে। শুরুতে দুই-তিন মাস ভালো ছিল, কিন্তু এখন স্ট্যান্ডার্ডের নিচে নেমে গেছে। প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাকে বলছি, সুপারভাইজারদের নিয়ে বসে ওয়ার্ডভিত্তিক কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখুন। কোনো অজুহাত শুনব না।”
তিনি বলেন, “আমি যেকোনো সময় না বলে রাতে ওয়ার্ড পরিদর্শনে যেতে পারি। সেখান গিয়ে যদি দেখি পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে কেউ নেই, তাহলে দায় আপনাদের নিতে হবে। চাকরি হারালে আর কোনো অজুহাত গ্রহণযোগ্য হবে না।”
মশক নিধন অভিযানেও অসন্তোষ প্রকাশ করে মেয়র বলেন, “অনেক ওয়ার্ডে মশক নিধনের কার্যক্রম এখন অনেকটাই কমে গেছে। আগ্রাবাদে গিয়ে দেখলাম, যতক্ষণ আমি ছিলাম ততক্ষণ স্প্রে করা হয়েছে, পরে কাজ বন্ধ। এভাবে হবে না। অভিযানগুলো তদারকি করে নিয়মিত চালাতে হবে। প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার প্রয়োগ করতে হবে।”
টিসিবি কার্ড বিতরণের ধীরগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র বলেন, তিনি বলেন, “টিসিবির মাত্র ৪০ হাজার কার্ড একটিভ হয়েছে। আমি নিজেই ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে দেখব কী অবস্থা। কার্ড বিতরণের সংখ্যা এক হাজারের নিচে থাকা ওয়ার্ডগুলো তালিকা করে পরিদর্শনে যাব। প্রতিদিন অন্তত দুইটি করে ওয়ার্ড ভিজিট করব। পারফরমেন্স যদি ভালো না হয়, আমি নিজেই যাচাই করব।”
গরিব ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে মেয়র বলেন, “টিসিবি কার্ড বিতরণে শুধু প্রকৃত গরিবদের নাম থাকতে হবে। নিম্ন-মধ্যবিত্তরাও প্রাধান্য পাবে। ধনী মানুষকে কার্ড দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। কেউ যদি অনিয়ম করে, সে আমার ছোট ভাই হলেও ছাড় দেওয়া হবে না। দুর্নীতি করলে চাকরিও থাকবে না।”
তিনি আরও বলেন, “টিসিবি কার্ড বিতরণ কার্যক্রমের মধ্যে কোন ওয়ার্ডে কী সমস্যা রয়েছে, সরেজমিনে গিয়ে তা চিহ্নিত করব এবং ওয়ার্ডভিত্তিক সেবা কার্যক্রমের গতি ত্বরান্বিত করব। গরিব ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত জনগণের জন্য এই সেবা নিশ্চিত করতে হবে।”
ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া পরিস্থিতি নিয়ে মেয়র বলেন, “চিকনগুনিয়া ও ডেঙ্গু—দুটোই মশার মাধ্যমে ছড়ায়। পরিষ্কার পানিতে জমে থাকা লার্ভা থেকে এই রোগের বিস্তার ঘটে। তাই বাড়ির আঙিনায়, নির্মাণাধীন ভবনে, পলিথিন, প্লাস্টিক, ডাবের খোসা—যেখানেই পানি জমে সেখানে সতর্ক হতে হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চিকনগুনিয়ায় জয়েন্টে ব্যথা বেশি হয়, ডেঙ্গুতে সারা শরীরে ব্যথা হয় ও শক হয়ে মৃত্যু ঝুঁকি থাকে। তাই জ্বর হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।”
প্রকৌশল বিভাগের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, “আমি নিউ মার্কেট থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত রাস্তার গর্ত দেখে এসেছি। এটা সহ্য করা যায় না। তাই দ্রুত তালিকা করে ৪১ ওয়ার্ডে রাস্তার গর্ত সংস্কারের কাজ শুরু করতে হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরুর প্রস্তুতি নিতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “যেসব বাড়ি খালের পাশে অবস্থিত, যেসব গার্মেন্টস আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে, সেগুলো খাল-নালায় বর্জ্য ফেললে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। খাল-নালার তালিকা করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ জোরদার করতে হবে।”
মেয়র সকল বিভাগকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা শতভাগ আন্তরিকভাবে জনগণের জন্য কাজ করতে চাই। দায়িত্ব পালনে কেউ অবহেলা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন চসিকের সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী আনিসুর রহমানসহ চসিকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।